বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি ও এর বিভিন্ন উপাদান (পাঠ ৪)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য | - | NCTB BOOK
721
721

যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষ যে সংস্কৃতি লালন করে আসছে সাধারণ অর্থে তাই লোকসংস্কৃতি। লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। নিম্নে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি ও এর বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

লোকসংস্কৃতির ধারণা

লোকসংস্কৃতি বলতে আমরা বুঝি সাধারণ মানুষ ও তার সমাজের সংস্কৃতি। অর্থাৎ লোকসমাজের সংস্কৃতি। লোকসংস্কৃতির জন্ম সাধারণ মানুষের মুখে মুখে, তাদের চিন্তায় ও কর্মে। হাজার বছর ধরে এই সংস্কৃতি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।

বাংলাদেশে আদিকাল থেকেই মানুষ লোকসংস্কৃতি লালন করছে। মানুষের মুখে মুখে চলা লোকসংস্কৃতির অনেক কিছুই সময়ের সাথে সাথে একটু একটু করে পরিবর্তন হয়েছে। লোকসংস্কৃতির যাত্রা শুরু হয়েছে গ্রামীণ কৃষিজীবী সমাজের মধ্য থেকে। কতক রীতি বা আচারের উপর ভিত্তি করে লোকসংস্কৃতি গড়ে উঠে। তার কয়েকটি হলো-

ভীতি থেকে: লোকসমাজে ভূতের ভয়ের অস্তিত্ব অনেক পুরাতন। যদিও বৈজ্ঞানিকভাবে বিচার করলে ভূত বলে কিছু নেই। কিন্তু লোকসমাজে ভূত থাকার ব্যাপারে গভীর বিশ্বাস রয়েছে। 'মানুষ মারা গেলেও আত্মা অমর' এই ধারণা থেকে ভূত থাকার ব্যাপারে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ অনেক ভূতের কথা কল্পনা করেছে। যেমন- মামদো ভূত, প্যাঁচাপেঁচি, শাঁখচুন্নি, পেতনি ইত্যাদি। আবার লোকবিশ্বাস অনুযায়ী এই সব ভূত তাড়াতে ওঝারা ঝাড়ফুঁক, হলুদ পোড়া, মরিচ পোড়া ইত্যাদি প্রয়োগ করে।

গায়েহলুদ অনুষ্ঠান: গায়েহলুদ আমাদের সমাজের বিবাহরীতির একটি উল্লেখযোগ্য দিক। গায়েহলুদ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের আচার-আচরণ ও সংস্কার পালন করা হয়।

রোগ মুক্তির জন্য: হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পির-ফকির, সাধু-সন্ন্যাসী বা মৌলবি-পুরোহিতদের কাছ থেকে তাবিজ-কবজ, পানিপড়া ইত্যাদি রোগ মুক্তির জন্য ব্যবহার করে।

চোখ লাগা থেকে বাঁচার জন্য : লোকসমাজে বিশ্বাস রয়েছে বাচ্চার ওপর অশুভ দৃষ্টি পড়লে ক্ষতি হতে পারে। সাধারণভাবে একে চোখ লাগা বলে। অশুভ দৃষ্টি কাটানোর জন্য তাই বাচ্চার কপালের পাশে কাজলের টিপ দেওয়া হয়।

বৃষ্টি নামানোর জন্য: অনেক দিন খরা হলে অর্থাৎ বৃষ্টি না নামলে কৃষক খুব চিন্তায় পড়ে যায়। চাষাবাদের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। বৃষ্টি নামানোর জন্য গ্রামের মেয়েরা একটি অনুষ্ঠান করে। তারা কুলা নিয়ে বাড়ি বাড়ি যায়। মুখে বৃষ্টির গান গায় বা ছড়া কাটে। বাড়ির মেয়েরা কুলার ওপর পানি ঢেলে দেয়। তারা বিশ্বাস করে এভাবেই আকাশ থেকে বৃষ্টি নামবে। আধুনিক সেচ ব্যবস্থার কারণে এ রীতির প্রচলন বর্তমানে নেই বললেই চলে।

লোকসংস্কৃতির উপাদান

যেসব বিষয়ে লোকসংস্কৃতির পরিচয় রয়েছে তাকে লোকসংস্কৃতিকর উপাদান বলা হয়। সাধারণত এই উপাদান দুই ধরনের হতে পারে। ক. বস্তুগত উপাদান ও খ. অবস্তুগত উপাদান।

ক. বস্তুগত উপাদান: লোকসংস্কৃতির যেসব উপাদান ধরা যায় ছোঁয়া যায় তা বস্তুগত উপাদান। যেমন-
লোকশিল্প: তাঁতশিল্প, শাখা বা শঙ্খশিল্প, কাঁসাশিল্প, মৃৎশিল্প, নকশিকাঁথা, বেতশিল্প ইত্যাদি।
লোকবিজ্ঞান: তাঁতশিল্পের চরকা, মাছধরার চাই, লাঙল-কাস্তে ইত্যাদি তৈরির প্রযুক্তি।
লোকযান: নৌকা, পালকি ইত্যাদি।

এসব ছাড়াও রয়েছে লোকতৈজসপত্র, লোকবাদ্য, লোকঅলংকার ইত্যাদি লোকসংস্কৃতির বস্তুগত উপাদান।

খ. অবস্তুগত উপাদান: যেসকল সাংস্কৃতিক বিষয় ধরা বা ছোঁয়া যায় না অর্থাৎ মানুষের চিন্তা থেকে জন্ম নেয় এবং মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তাকে লোকসংস্কৃতির অবস্তুগত উপাদান বলা হয়। অবস্তুগত উপাদানের প্রধান বিষয়টিই হচ্ছে সাহিত্য। এসব সাহিত্যের লিখিত রূপ নেই। মানুষের মুখে মুখে তা ছড়িয়ে আছে। এ ধারার সাহিত্য লোকসাহিত্য নামেও পরিচিত। যেমন-লোককাহিনি বা কিসসা, লোকগীতি, লোকচিকিৎসা, লোকক্রীড়া, লোকসংগীত, প্রবাদ-প্রবচন, ডাকের কথা, খনার বচন, ছেলে ভুলানো ছড়া, ধাঁধা, লোকনাটক ইত্যাদি।

এছাড়াও লোক উৎসব, মন্ত্রতন্ত্র ইত্যাদিও অবস্তুগত উপাদান।

কাজ-১: তোমাদের পারিবারিক জীবনে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মধ্যে থেকে লোকসংস্কৃতির উপাদান চিহ্নিত কর।
কাজ-২: বস্তুগত ও অবস্তুগত লোকসংস্কৃতির তুলনা কর।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion